হিন্দুরা মূর্তি পূজা বা দেব-দেবীর পুজা করেন কেনো?
হিন্দুরা মূর্তি পূজা বা দেব-দেবীর পুজা করেন কেনো?
হিন্দুরা মূর্তি পূজা বা দেব-দেবীর পুজা করেন কেনো? দেব-দেবীর পূজা বা মূর্তি পূজা করলে ভগাবনকে পাওয়া যায় ?
আবার আমাদের সনাতন ধর্ম বর্তমানে রক্ষক বা প্রচারক তাদের কেউ কেউ ও বলে থাকেন দেব দেবীর পূজা করা বৃথা এতে কোনো দিন পরমেশ্বর ভগবানকে পাওয়া যাবে না তাদের কাছে দুই হাত জোর করে বলবো আপনারা গীতার শ্লোক বা পরমেশ্ব শ্রীকৃষ্ণ ভগবানের সঠিক বানী সকলকে সঠিক ভাবে জানাতে চেষ্টা করুন কোনো বিভ্রান্তি তৈরী করবেন না
যাক আসল কথায় আসি চলুন জেনে নেওয়া যাক।
হিন্দুরা বহু দেব-দেবীর পূজা করলেও হিন্দুরা একজনেরই উপাসনা করে কি না বা হিন্দুরা কার উপাসনা করে ?
গীতা অধ্যায় ৭, অনুচ্ছেদ নয় শ্লোক নং ২০।
যা হোক, এই শ্লোকের অর্থ হিসেবে ইসকন প্রকাশিত গীতায় বলা হয়েছে,
“জড় কামনা বাসনার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে, তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয় এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে বিশেষ নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।”
এই শ্লোকের দ্বারা গীতায় মূ্র্তি পূজাকে যে নিষিদ্ধ করা হয় নি, নিরুৎসাহিত করা হয়েছে মাত্র, সেটা একটু পরেই বুঝতে পারবেন। তার আগে এই শ্লোকের আসল অর্থটা আপনাদের কাছে একটু পরিষ্কার করি।
এই শ্লোকে বলা হচ্ছে, “জড় কামনা বাসনার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে, তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয়”- এখানে জ্ঞান মানে ক্ষমতা, যে ক্ষমতার দ্বারা কাউকে উপলব্ধি করা যায়, কারো কাছে পৌঁছানো যায়।
ব্রহ্মজ্ঞান অর্জনের পথ বা ঈশ্বরকে পাওয়ার পথটা কী ? এই পথই হলো নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধি অনুসারে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করা, যার স্বীকৃতি পরমেশ্বর দিয়ে রেখেছেন, গীতার ৭/২১ নং শ্লোকে,
"যো যো যাং যাং তনুং ভক্ত শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি।
তস্য তস্যাচলং শ্রদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম।।"
এর অর্থ,পরমাত্মারূপে আমি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করি। যখন কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে, তখনই আমি সেই সেই ভক্তের, তাতেই অচলা শ্রদ্ধা বিধান করি।
স্বল্পজ্ঞানীদের পক্ষে করা এই মূর্তি পূজা যে বৃথা নয় এবং এই মূর্তি পূজার ফল যে, স্বয়ং ঈশ্বরই তার ভক্তকে প্রদান করে, সে কথা বলা আছে গীতার ৭/২২ নং শ্লোকে,
"স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে।
লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান্ হিতান্।"
এর অর্থ, সেই পুরুষ শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে যেই দেব বিগ্রহের পূজায় তৎপর হন এবং সেই দেবতার মাধ্যমে আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তু অবশ্য লাভ করেন।
এখানে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, যে ব্যক্তি যে দেবতার পূজাই করুক, সে আমার দ্বারাই তার ফল লাভ করে। এখানেও দেবতাদের পূজাকে স্বীকৃতি দেওয়া হলো।
কিন্তু এই দেব পূজার ফল যে অস্থায়ী, সে কথা বলা হয়েছে গীতার ৭/২৩ নং শ্লোকে এবং এই ৭/২০-২৩ নং শ্লোকের মাধ্যমে এই কথাও বলে দেওয়া হয়েছে যে, না জানা বা অল্পবুদ্ধির কারণে অন্য দেব-দেবীর পূজাকে স্বীকার করে নেওয়া হলেও চরম লক্ষ্য বা মোক্ষপ্রা্প্তির জন্য একমাত্র ঈশ্বরকেই ভজনা বা তার কাছে প্রার্থনা করতে হবে, কিন্তু যাদের কাছে সেই ব্রহ্মজ্ঞান নেই বা যাদের এখনও সেই জ্ঞান অর্জন হয় নি, ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর জন্য দেব-দেবীর আশ্রয় তাদেরকে নিতেই হবে। কারণ, পৃথিবীর সকল মানুষ যেমন সমান জ্ঞান ও ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেয় না, তেমনি এক জন্মে সকল মানুষের পক্ষেও ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। জন্ম জন্মান্তর ধরে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করতে করতে কোনো এক জন্মে হয়তো পরমেশ্বরের কাছে পৌঁছানো যাবে, যেমন নদী এঁকে বেঁকে বিভিন্ন পথ ধরে কোনো না কোনো এক সময় সমুদ্রে পৌঁছেই যায়।
হিন্দু শাস্ত্রে একজন ঈশ্বরের উপাসনা করতে বলা হয়েছে। এখন দেখা যাক, বহু দেব-দেবীর পূজা করলেও হিন্দুরা একজনেরই উপাসনা করে কিনা বা হিন্দুরা কার উপাসনা করে ?
পরমব্রহ্ম বা ঈশ্বরের তিনটি কার্যকরী রূপের নাম- ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর; এরা কোনো আলাদা আলাদা সত্ত্বা নয়, একই ঈশ্বরের আলাদা তিনটি রূপের নাম। ব্রহ্ম যখন সৃষ্টি করেন, তখন তার নাম ব্রহ্মা, যখন পালন করেন, তখন তার নাম বিষ্ণু এবং যখন ধ্বংস করেন, তখন তার নাম মহেশ্বর বা শিব। সুতরাং ব্রহ্মা, বিষ্ণু বা মহেশ্বর হিসেবে আমরা যারই পূজা করি না কেনো তা শেষ পর্যন্ত এক ব্রহ্মেরই পূজা।
আবার ব্রহ্মের সৃষ্টিকারী রূপের নাম ব্রহ্মা এবং ব্রহ্মার নারীশক্তি হলো সরস্বতী, সুতরাং সরস্বতী পূজা করা মানে হলো ব্রহ্মার পূজা করা এবং ব্রহ্মার পূজা মানেই হলো ব্রহ্মের পূজা। একইভাবে বিষ্ণুর নারী শক্তি হলো লক্ষ্মী এবং শিবের নারী শক্তি হলো দুর্গা বা কালী। সুতরাং লক্ষ্মী এবং দুর্গা বা কালীর পূজা করা মানেই হলো বিষ্ণু বা শিবের মাধ্যমে এক পরমব্রহ্মেরই পূজা করা।
এছাড়াও গীতার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, আমিই কার্তিক, আমিই রাম, আমি বলরাম, এমন কিছু নেই যাতে আমি নেই, এর প্রমান শ্রীকৃষ্ণ দিয়েছেন, অর্জুনকে তার বিশ্বরূপ প্রদর্শনের মাধ্যমে, যে বিশ্বরূপের মধ্যে সমস্ত দেব-দেবীর স্থান ছিলো। এই তথ্য এটা প্রমান করে যে, যেকোনো দেব-দেবীকে আশ্রয় করেই ঈশ্বরের কাছে পৌঁছা যায় এবং যে কোনো দেব-দেবীর পূজা মানেই প্রকারান্তরে এক ঈশ্বরেরই পূজা।
প্রণাম সকল পাঠক বন্ধুদের আমার এই জ্ঞান টুকু সকল মা বাবা বোন দাদাদের কাছে পৌচ্ছে দিন। যারা দেব দেবীর পুজা করাকে অনেকেই তামসিক বা অবহেলা করেন তারা যদি হিন্দু শাস্ত্র মানেন তারা অবসই বিশ্বাস করবেন গীতা বানী মিথ্যে হতে পারেন না যা পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ দিয়ে গিয়েছেন।
জয় হউক সনাতন জাতির।
জয় হউক সনাতন ধর্মের।
লিখেছেন,
বিদ্রহ আমার এই লিখায় যদি কারো মনে দূঃখ দিয়ে থাকি, বা কোথাও ভুল করে থাকি তাহলে আমাকে ধরিয়ে দিবেন সূদরে নেবো,
No comments