একাদশী পারনের নিয়ম ও একাদশীতে কি কি খাওয়া নিষিদ্ধ কি কি খাওয়া উচিত জানুন
একাদশী পারনের নিয়ম ও একাদশীতে কি কি খাওয়া নিষিদ্ধ কি কি খাওয়া উচিত জানুন
একাদশী পালনের সঠিক নিয়ম কি?, একাদশী পারনে কি খেতে হয়? একাদশীতে কি কি খাওয়া নিষিদ্ধ বা কি কি খেতে পারে?
প্রিয় পাঠক গণ, শুরুতে আমরা কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে হাজির হয়েছি যা আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। আসুন, তাহলে আমরা এক এক করে সকল প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করি।
নিষিদ্ধ জানুন
একাদশী ব্রত পালনের আগে জানতে হবে ব্রত পালনের সঠিক নিয়ম সমূহ। ব্রত পালন করা যেমন জরুরি তাঁর চেয়ে ও বেশি জরুরি ব্রত পালনের নিয়ম সম্পর্কে জানা। তাই, আজকের পোস্টে আমরা একাদশী ব্রত পালনের সঠিক নিয়ম, পারনের সঠিক নিয়ম ও একাদশীর খাদ্য তালিকা নিয়ে করেছি। বিস্তারিত আলোচনা ।
(১. একাদশী ব্রত পালনের সঠিক নিয়ম
প্রিয় পাঠক গণ, এখন আমরা আলোচনা করব একাদশী ব্রত পালনের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। একাদশী মূলত একটি চন্দ্র তিথিকে কেন্দ্র করেই পালিত হয়ে থাকে। একদশীর মূল কাজ হচ্ছে নিরন্তর ভগবানকে স্মরণ করা। আপনারা যে নিয়মে বা যে সময়ে একাদশী ব্রত পালন করেন না কেন, ভগবানকে ভক্তিভরে স্মরণ করাই যেন আপনার মূল লক্ষ্য হয়। যে সকল ভক্তগণ একাদশী পালন করতে চান, তাদের একাদশী পালনের সঠিক নিয়ম যেনে নেওয়া উচিত।
কারণ সঠিক নিয়ম না জেনে একাদশী পালন করলে পূণ্য থেকে পাপে হয়
এ পালন করলে পূণ্য থেকে পাপ বেশি হয় তাই একাদশী ব্রত পালনের পূর্বে অবশ্যই একাদশী পালনের নিয়মাবলী জেনে নেওয়া আবশ্যক।
২০২৪ ইসকন এবং বৈষ্ণব মতে সঠিক সময় জানুন
একাদশী ব্রত পালনের সঠিক নিয়ম সমূহ হলো:
■ সবার প্রথমে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে ঠাকুর ঘরে গিয়ে আরতি করতে হবে।
■ তারপর ঠাকুরের নাম জপ করতে হবে।
■ মনে কোনো খারাপ চিন্তা, কু-ভাবনা আনা যাবে না।
■ গায়ে কোন রকম প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না যেমন: সাবান, শেম্পু, লোশন ইত্যাদি।
■ গায়ে কোন রকম সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না।
■ একাদশীর দিন পরনিন্দা, কুকথা, মিথ্যা আচার, ক্রোধ, চুল কাটা, নখ কাটা, ইত্যাদি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
■ সমর্থ হলে দশমীতে একাকার, একাদশীতে নিরাহার এবং দ্বাদশীতে একাহার করতে হবে।
■ তা করতে অসমর্থ হলে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার ।
■ গায়ে কোন রকম প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না যেমন: সাবান, শেম্পু, লোশন ইত্যাদি।
■ গায়ে কোন রকম সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না।
■ একাদশীর দিন পরনিন্দা, কুকথা, মিথ্যা আচার, ক্রোধ, চুল কাটা, নখ কাটা, ইত্যাদি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
■ সমর্থ হলে দশমীতে একাকার, একাদশীতে নিরাহার এবং দ্বাদশীতে একাহার করতে হবে।
■ তা করতে অসমর্থ হলে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার ।
২. একাদশী পারনের নিয়ম
একাদশী তিথির পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে পারনের জন্য যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য দিয়ে ভগবানকে ভোগ নিবেদন করতে হবে। ভগবানকে ভোগ নিবেদন করার পর একাদশীর পারন মন্ত্র তিনবার ভক্তিভরে পাঠ করে প্রসাদ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে উপবাস সমাপ্ত করতে হবে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই একাদশীর আগের দিন ও একাদশীর পরের দিন নিরামিষ খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করবেন।
(৩.একাদশীতে কি কি খাওয়া নিষিদ্ধ
প্রিয় পাঠক গণ, এবার আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব একাদশী ব্রত পালনের সময় কি কি খাওয়া নিষিদ্ধ অর্থাৎ একাদশীর দিন কি কি খাওয়া যাবে না সেসকল বিষয়ে। একাদশীতে কি কি খাওয়া নিষিদ্ধ সে বিষয়ে অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। তাই, তাঁদের উদ্দেশ্যে আমাদের আজকের পোস্টটি। একাদশীতে পাঁচ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ করা যাবে না সেগুলো হলো:
১) ধানজাতীয় সকল রবিশস্য যেমন:
চাউল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খৈ ইত্যাদি।
২) গমজাতীয় সকল রবিশস্য যেমন:
আটা, ময়দা, সুজি, সকল প্রকার বিস্কুট, চানাচুর, হরলিক্স ইত্যাদি।
৩) যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল রবিশস্য যেমন : ছাতু, খই, রুসি ইত্যাদি।
৪) ডালজাতীয় সকল রবিশস্য যেমনঃ
মুগ, মাসকলাই, খেসারি, মসুরি, ছোলা, অড়হর, ফেলন, মটরশুটি, বরবটি ও শিম ইত্যাদি।
৫) বিভিন্ন তেল যেমন: সরিষার তেল,
সয়াবিন তেল, তিলের তেল, ইত্যাদি।
এছাড়াও অনেকের চা/সিগারেট/পান/ কফি ইত্যাদির প্রতি নেশা আছে। একাদশী ব্রত উপবাস পালনের দিন এই সকল নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন বর্জন করতে হবে।
৪. একাদশীতে কি কি খাওয়া যাবে
একাদশী হল হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে মাসের শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের একাদশ তম চন্দ্র তিথি। হিন্দু ধর্মের প্রতিটি একাদশী ব্রতের সময় নির্ধারণ করা হয় চাঁদের অবস্থান অনুসারে। একাদশী ব্রত হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয়ভাবে পালিত হয়ে থাকে। এই দিনে বৈষ্ণব অনুগামীরা একাদশী ব্রত পালন করে ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্য উপাসনা করে। তাছাড়া একদশীর মূল কাজ হচ্ছে নিরন্তর ভগবানকে স্মরণ করা।
পঞ্জিকা অনুযায়ী একাদশী ব্রত নির্জলা বা জল ব্যতীত পালন করার বিধান আছে, আর সেগুলো যদি আপনি সেমতে পালন করতে পারেন তাহলে আপনি অধিক পূর্ণ লাভ করতে পারবেন। তবে, অনেকেই তাদের বৃদ্ধ বাবা - মা এবং ছোট ছেলে, মেয়েদের জন্য আমাদের কাছে জানতে ময় কি চেয়েছেন একাদশী ব্রত পালনের সময় কি কি খাওয়া যেতে পারে
তাহ, তাঁদের উদ্দেশ্যে বলে রাখি কেউ যদি নির্জলা একাদশী ব্রত পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্ত্রে তাদের জন্য কিছু ফলমূল এবং সবজি খাওয়া বিধান আছে। আর নিচে আমরা সেই সকল ফলমূল এবং সবজি গুলো উল্লেখ করেছি যা আপনি একাদশীর দিন চাইলে খেতে পারেন।
যেমন: গোল আলু, মিষ্টি আলু, চাল
কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, টমেটো,
ফুলকপি ইত্যাদি সবজি ঘি বা বাদাম তেল
দিয়ে রান্না করে ভগবানকে ভোগ নিবেদন
করে আহার করতে পারেন।
রান্নায় হলুদ, মরিচ, ও লবণ ব্যবহার করার বিধান আছে। তাছাড়া একাদশীতে অন্য আহার্য যেমনঃ দুধ, কলা
আপেল আঙ্গুর আনারস আখ তরমজ বেল নাড়িকেল, বাদাম, লেবুর শরবত ইত্যাদি ফলমূলাদীও খাওয়া যাবে।
৫. একাদশী সংকল্প মন্ত্র বাংলা অর্থ সহ
“একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্থিত্বা ওহম অপরেহহনি |
ভক্ষামি পুশুরীকাক্ষ শরাণং মে ভাবাচ্যুত ||"
বাংলা অর্থঃ হে পুন্ডারীকাক্ষ! হে অচ্যুত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার সরণাপন্ন হচ্ছি।
(৬.একাদশী পারন মন্ত্র বাংলা অর্থ সহ
"একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব ||"
বাংলা অর্থঃ হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।
প্রিয় পাঠক গণ, আজকের পোস্টটি পড়ে আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। এবং এই রকম আরও গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় পোস্ট পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ ও ওয়েব সাইট।
হরে কৃষ্ণ রাধেঁ রাধেঁ
নমস্কার সবাইকে
No comments