Header Ads

আসুন সনাতনী ছেলে মেয়েরা বন্ধুত্ব করি ধর্মান্তর মুক্ত সমাজ গড়ি।

আসুন সনাতনী ছেলে মেয়েরা বন্ধুত্ব করি ধর্মান্তর মুক্ত সমাজ গড়ি।


গীতা কর্ম করার উপদেশ কেন দেয়?
গীতায় কৃষ্ণ বলেন, কর্ম করলে বন্ধন থাকবে কী


যদি থাকে হিন্দুত্ব করতে পারো বন্ধুত্ব 

"১৪ই ফেব্রুয়ারিতে  ফুল নয় গীতা দাও"_____


ফেসবুকে কিছুদিন ধরে একটা পোস্ট খুব দেখছি তা হলো,,,,"১৪ই ফেব্রুয়ারী যদি আমি ফুল না দিয়ে গীতা দেই তাহলে আমাদের সনাতন ধর্মের ছেলে মেয়েদের  মনে হয় সব চেয়ে ভালো হয়। 


   এরকম পোস্টে আমি কি বলবো বুঝতে পারি না,,,,,

কর্ম করে যাও, ফলের কথা ভাববে না'... জানুন গীতার কর্মযোগের কথা,,


গীতা অনুযায়ী কর্ম ত্যাগ অর্থাৎ অকর্মের তুলনায় কর্ম শ্রেয়স্কর। তাই গীতায় ফলের আশা ত্যাগ করে কাজ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য কর্ম করা উচিত, কামনার বশবর্তী হয়ে নয়,,


  • গীতায় সংকল্পের স্বাধীনতাকে স্বীকার করা হয়েছে।
  • বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ কর্ম করা ব্যক্তির নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
  • তাই সংকল্পবদ্ধ কর্মের প্রতি যদি কর্ত্তাভাব থাকে তা হলে সেই কর্ম ইষ্ট, অনিষ্ট ও মিশ্র এই তিন ধরণের ফল দেয়।

:নিষ্কাম কর্ম গীতার প্রধান উপদেশ। মনে করা হয়, কোনও ব্যক্তি এক মুহূর্তের জন্যও কোনও কাজ না-করে থাকতে পারে না। কর্ম করা ব্যক্তির অধিকার ও কর্তব্য দুইই। ব্যক্তিকে কর্ম করে যাওয়া উচিত। তবে গীতায় কর্মের প্রতি মমতা ও আসক্তির বিরোধ করা হয়েছে। এখানে যে বিচার প্রচার করা হয়, তা হল—

কর্ম করাই তোমার অধিকার, ফলাফলে না, তাই তুমি কর্মফলের বাসনা রেখো না এবং কর্ম ত্যাগ করার বিচার কর না।’ (২/৪৭)

তাই আদেশ দেওয়া হয়েছে যে— ‘মা কর্মফল হেতুর্ভূ’, অর্থাৎ কর্মফলের প্রত্যাশা কর না। কর্মফলের বাসনায় যুক্ত থেকো না, কারণ ‘ফলেসক্তো নিবধ্যতে’ অর্থাৎ ফলের আসক্তির ফলে কর্মবন্ধন দৃঢ় হয়। তাই গীতায় ফলের ইচ্ছা ত্যাগ করে কর্ম করার শিক্ষা দেওয়া হয়। যাঁরা কর্মফলের ইচ্ছা রাখে, তাঁরা দয়ার পাত্র হয় (কৃপণঃ ফলহেতবঃ)।

কর্মফলের পরিণামের প্রতি লালসা বা কামনা থেকে বিষয়ের প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি পায়। কামনার সিদ্ধিতে বিঘ্ন ঘটলে রাগ উৎপন্ন হয়, রাগের ফলে মতিভ্রষ্ট হয়, অবিবেক জন্ম নেয়। অবিবেকের ফলে স্মৃতি নাশ হয়, ভালো ও মন্দ বিচারের ক্ষমতা চলে যায় এবং ব্যক্তি নিজের জন্য শ্রেষ্ঠ বস্তু নির্বাচন করতে পারে না। এই ভাবে ব্যক্তি কর্মবন্ধনে আটকে যেতে থাকে। কর্ম করার প্রক্রিয়া উদ্দেশ্য থেকে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত, তা কামনা দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত নয়।

এবার প্রশ্ন হল, কর্মফলের ইচ্ছা ও কামনা ছাড়া কর্মের প্রবৃত্তি কেমন হবে? ফলের আশা না-করে ব্যক্তি কী ভাবে কর্ম করতে পারবে? বলা হয়েছে, কামনা পূরণের জন্যও কর্ম করা হয় আবার কামনার নিবৃত্তির জন্যও কর্ম করা হয়। সামান্য ব্যক্তি কামনা পূরণের জন্য কাজ করেন, কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তি আসক্তি ত্যাগ করে আত্মশুদ্ধির জন্য কর্ম করেন।

আসক্তির কারণে কর্মবন্ধন মজবুত হলে গীতা কর্ম করার উপদেশ কেন দেয়? কোন কাজ করা উচিত, কোনটি করা উচিত নয়? এর চেয়ে কী সন্যাস ভালো? অর্জুনও এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। গীতায় কৃষ্ণ বলেন, কর্ম করলে বন্ধন থাকবে কী থাকবে না তা কর্তার দৃষ্টিকোণের ওপর নির্ভর করে।

গীতায় সংকল্পের স্বাধীনতাকে স্বীকার করা হয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ কর্ম করা ব্যক্তির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তাই সংকল্পবদ্ধ কর্মের প্রতি যদি কর্ত্তাভাব থাকে তা হলে সেই কর্ম ইষ্ট, অনিষ্ট ও মিশ্র এই তিন ধরণের ফল দেয়। কিন্তু যে কাজে ‘আমি কর্ত্তা নই’— এমন মনোভব থাকে, তা বন্ধনকারক হয় না। তাকে ‘চেষ্টা’ বলা হয়েছে। যে ভাবে কাঁটা থেকে কাঁটা তোলা হয়, সে ভাবেই চেষ্টা কর্মবন্ধন থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। নিষ্কাম মনোভব লাভ করার জন্য যে বিষয়গুলি জানা উচিত—

লোকসংগ্রহ

কর্ম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্বার্থ চিন্তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কর্ম করলে সমস্ত ধরণের বিকৃতি আসে। স্বার্থ থাকলে কর্ম তুচ্ছ ও বন্ধনকারক হয়ে পড়ে। কিন্তু বন্ধন ভেঙে মোক্ষ লাভ করা মানুষের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য স্বহিতের ইচ্ছায় করা কাজ অভীষ্ট হয় না। আমাদের কাছে যত বোধ, সময়, সামর্থ্য ও সামগ্রী আছে, তা দিয়েই অন্যের সেবা করলে, সেই সেবা লোকহিতকারী হবে। অন্যের হিতের জন্য যে কাজ করা হয় তাকে লোকসংগ্রহ বলা হয়। গীতায় স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, আসক্তি মুক্ত থেকে লোকসংগ্রহকে মাথায় রেখে কাজ করলে ব্যক্তির সংসিদ্ধি হয়।

গীতায় সর্বভূত-হিতকে সর্বোচ্চ আদর্শ মনে করা হয়। যে ব্যক্তি সমস্ত জীবের হিতে রত, সেই ঈশ্বর বা মুক্তি লাভ করতে পারে। সর্বভূত-হিতের জন্য জ্ঞানী ব্যক্তিকে অনাসক্ত থেকে কাজ করা উচিত। আসক্তি মুক্ত এবং কারণ মুক্ত হয়ে সমস্ত জীবের প্রতি অহিংসা, অক্রোধ, অদ্রোহ, করুণা, সত্য, সদ্ভাবনা, পরোপকার ইত্যাদি পালন করলে মানুষের মধ্যে দেবত্ব গুণের আগমন ঘটে। এগুলিকে গীতায় ‘ঈশ্বরীয় সম্পদ’-এর লক্ষণ বলা হয়েছে। ‘ঈশ্বরীয় সম্পদ’ দেবতুল্য পুরুষের গুণ বা ঈশ্বরীয় গুণকে বলা হয়। যাঁর অভ্যাস করলে ব্যক্তি পরম লক্ষ্য, মোক্ষ লাভ করতে পরে।

স্বধর্ম পালন

স্বধর্ম পালন

সামাজিক কল্যাণকে গুরুত্ব দিয়ে গীতায় স্বধর্ম পালনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। স্বধর্মকে বর্ণ-ধর্ম রূপে গ্রহণ করা হয়েছে। নিজের নিজের বর্ণ অনুযায়ী কর্ম করা বর্ণধর্ম। গীতা অনুযায়ী বর্ণ-ধর্ম ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দেওয়া কর্ম নয়। ব্যক্তির গুণ ও কর্ম অনুযায়ী চারটি বর্ণরের রচনা করা হয়েছে।

তাই স্বধর্ম বা বর্ণ-ধর্ম ব্যক্তির স্বাভাবিক নিয়ত কর্ম। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্রের বিভাজন গুণ ও কর্ম অনুযায়ী করা হয়। প্রতিটি বর্ণের সদস্যকে নিজের বর্ণের জন্য নির্ধারিত কর্ম ফলের আশা থেকে মুক্ত হয়ে কাজ করা উচিত। না-হলে কর্তব্য পথ থেকে বিচলিত হয় ব্যক্তি। স্বধর্ম পালনের মাধ্যমে মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়।

গীতা অনুযায়ী, আকর্ষক পরধর্মের তুলনায় স্বর্ধম শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি স্বভাব নিয়ত কাজ করে, সে পাপের ভাগীদার হয় না। গীতার আদেশ, দোষযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সহজ কর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়। স্বধর্ম পালন করতে গিয়ে ব্যক্তি যুদ্ধে প্রাণ হারালেও তাঁকে কল্যাণকারী মনে করা হয়।


কর্ম, অকর্ম ও বিকর্ম


গীতা অনুযায়ী কর্ম ত্যাগ করাকে অকর্ম বলা হয়। স্বধর্ম বা নিয়ত কাজ করা সাধ্য লাভের জন্য প্রয়োজনীয়। নিয়ত কর্ম ত্যাগ করা অনুচিত। এমনকি সমস্ত কর্ম ত্যাগ করা সম্ভবও নয়। কর্ম করতেই হবে। আমরা শুধু কর্মফল ত্যাগ করতে পারি। তবে কিছু কর্মকে নিষিদ্ধ মনে করা হয়। দেশ, কাল, বর্ণ, আয়ু ইত্যাদির ওপর কর্মের নিষিদ্ধ হওয়া নির্ধারিত হয়। নিষিদ্ধ কর্ম, যা আসক্তি ছাড়া করা যায় না ও এ কারণে বন্ধনকারক হয়, তাকে বিকর্ম বলা হয়। হত্যা, মিথ্যে বলা, ব্যাভিচার ইত্যাদি বিকর্মের উদাহরণ। 


স্থিতপ্রজ্ঞতা


আমরা নিজের কর্মে নিষ্কামভাব কী ভাবে লাভ করতে পারি? অনাসক্ত হয়ে কী ভাবে কাজ করা যায়? নিষ্কাম কর্ম ব্যক্তির কাছ থেকে দৃঢ় মানসিক পরিস্থিতি দাবী করে। নিজের বুদ্ধি স্থির রেখেই নিষ্কাম কর্ম করা যায়। যে ব্যক্তি স্থিতপ্রজ্ঞ, সে নিজের সমস্ত কামনা ত্যাগ করে আত্ম-তুষ্ট থাকে। যে দুঃখে উদ্বিগ্ন হয় না, সুখের জন্য লালায়িত থাকে না এবং রাগ, ভয় ও ক্রোধ থেকে দূরে থাকে, এমন ব্যক্তিকে স্থিতধী বা স্থিতপ্রজ্ঞ বলা হয়।




No comments

Theme images by sndrk. Powered by Blogger.