কি নেই, যার সমাধান গীতায় পাওয়া যায় না?
কি নেই, যার সমাধান গীতায় পাওয়া যায় না?
সাফল্যের মূলমন্ত্র লুকিয়ে আছে কৃষ্ণের বাণীতে, আজও তা প্রাসঙ্গিক,,
বলা হয় আমাদের জীবনের এমন কোনও সমস্যা নেই, যার সমাধান গীতায় পাওয়া যায় না। গীতা ভালো ভাবে উপলব্ধি করতে পারলে জীবনে সাফল্য লাভের মূল মন্ত্র পাওয়া যায়। দেখে নিন সাফল্য পেতে কী নির্দেশিকা আছে গীতায়।
শ্রীমদ্ভগবত গীতার একটি শ্লোকে যোগেশ্বর কৃষ্ণ বলেন, ব্যক্তিকে নিজের মন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
তিনি অর্জুনকে বলেন, 'মন অত্যন্ত চঞ্চল। একে নিয়ন্ত্রণে রাখা ব্যক্তির দায়িত্ব। মন নিজের গতিতে চলে।'
কৃষ্ণের এই উপদেশ বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক
বহু যুগ পূর্বে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনকে গীতার যে জ্ঞান কৃষ্ণ দিয়েছিলেন, তা বর্তমান যুগেও প্রাসঙ্গিক। সমস্যা যে কোনও ধরণেরই হোক না-কেন, গীতায় সমস্ত সমস্যার সমাধান উল্লেখ করা রয়েছে। গীতার উপদেশ পালন করলে, তা ব্যক্তিকে সাফল্যের পথে এগিয়ে দিতে পারবে। এখানে জানুন গীতার কিছু উপদেশ সম্পর্কে--
রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
গীতায় যোগেশ্বর কৃষ্ণ যে সমস্ত শ্লোক বলেছিলেন, তার মধ্যে একটি শ্লোকে রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার কথাও বলা হয়েছে। এর অর্থ, ব্যক্তি যখন রাগ করে, তখন ভ্রম সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ ঠিক ও ভুলের মধ্যে বিভেদ ব্যক্তি ভুলে যায়। শুধু রাগ জীবিত থাকে। এর ফলে বুদ্ধিও ভ্রষ্ট হয়। এর পর সেই ব্যক্তির সঙ্গে যে কোনও সঠিক বিষয় তর্ক করার কোনও অর্থ থাকে না। এখান থেকেই ব্যক্তির পতন শুরু হয়। বর্তমান সময়ে নিরিখে এর প্রাসঙ্গিকতা বিচার করে বলা যায় যে, কোনও কাজ করার সময় ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হলে, সেই কাজই প্রভাবিত হয়। অনেক সময় রাগের বশে ব্যক্তি নিজের চাকরি, সম্পর্ক ও জীবনকেও বাজি রেখে দেয়। তাই রেগে গেলে, কিছুক্ষণ শান্ত ভাবে বসে, তার পরিণাম সম্পর্কে বিচার করে নেওয়া উচিত।
দৃষ্টিভঙ্গী
কৃষ্ণ বলেন, ব্যক্তিকে জ্ঞান ও কর্মকে এক ভাবে দেখা উচিত। অর্থাৎ এই দুটি বিষয়কে দেখার দৃষ্টিভঙ্গী একই হওয়া উচিত। বর্তমানে দেখা যায়, ব্যক্তি কাজ সম্পর্কে অনেক বড় বড় কথা বলে, তবে নিজে কোনও পরিস্থিতিতে পড়লে সে সব ভুলে গিয়ে, নিজের জন্য যা ঠিক, তা-ই করে। এর জন্য অজান্তে অন্যের অনিষ্টও করে থাকেন তাঁরা। তাই জ্ঞান ও কর্মকে একই দৃষ্টিতে দেখা উচিত। সেই কর্মই করা উচিত, যা করার সম্মতি আপনার জ্ঞান দিচ্ছে। এ ভাবে ব্যক্তি ভুল-ঠিক, পাপ-পুণ্যের মধ্যের ফারাক সহজে বুঝতে পারবে।
মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ
শ্রীমদ্ভগবত গীতার একটি শ্লোকে যোগেশ্বর কৃষ্ণ বলেন, ব্যক্তিকে নিজের মন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। তিনি অর্জুনকে বলেন, মন অত্যন্ত চঞ্চল। একে নিয়ন্ত্রণে রাখা ব্যক্তির দায়িত্ব। মন নিজের গতিতে চলে। কৃষ্ণের এই উপদেশ বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক। অনেক সময় আমরা জানি যে, যা করছি বা করব, তাতে কারও না-কারও অনিষ্ট হতে পারে। বর্তমানে কিছু সময়ের জন্য সেই কাজ আনন্দদায়ক হলেও, ভবিষ্যতে নিজেরাও ক্ষতির মুখে পড়তে পারি। চঞ্চল মনের জন্য ব্যক্তি সব জেনেশুনে ভুল পদক্ষেপ করে থাকে। তাই এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। না-হলে ব্যক্তির মনই তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রুতে পরিণত হবে।
ভালো বন্ধু
শ্রীমদ্ভগবত গীতায় কৃষ্ণ ভালো ও সত্যিকারের বন্ধু সম্পর্কেও বলেন-- ভালো বন্ধু সে, যে খারাপ সময় আপনার সঙ্গে থাকে। দুঃখ ও সমস্যায় আপনার পাশে যে দাঁড়িয়ে থাকবে, সেই আপনার সত্যিকারের বন্ধু। সমস্যা এলে যে দূরে সরে যায়, সে ভালো বন্ধু নয়। এমন হলে শীঘ্র তাঁর পরিত্যাগ করুন। না-হলে ব্যক্তির বন্ধুর সংখ্যা তো বাড়বে, কিন্তু প্রয়োজনে কারও সহযোগিতা লাভ করবেন না। বর্তমানেও এমন অনেক বন্ধু দেখা যায়, যাঁরা ভালো সময় সমস্ত বন্ধুদের সঙ্গে মিলে হাসি-ঠাট্টা, আনন্দে মেতে থাকেন। কিন্তু খারাপ সময় এলে সঙ্গ ছেড়ে দেন। খুব কম বন্ধুই এমন হয় যাঁরা কঠিন সময় আপনার সঙ্গে থাকেন।
অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন
কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন, ব্যক্তিকে নিজের গুরু ছাড়া অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান অর্জন করা উচিত। না-হলে ব্যক্তি সমস্যায় পড়তে পারে। বর্তমানে দেখা যায় যে, ব্যক্তি বয়স্কদের পরামর্শ এড়িয়ে যাচ্ছে। তবে এমন করা উচিত নয়। তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ করে এগোনো উচিত। যাতে সহজে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন। দেখা যায় যে, অসাফল্য সত্ত্বেও ব্যক্তি তা থেকে শিক্ষা লাভ না-করে, একই ভুল বার বার করে গিয়েছে। এর পরিবর্তে অতীতের ফলাফল বিশ্লেষণ করে শিক্ষা লাভ করা এবং সেই অভিজ্ঞতার সাহায্যে জীবনে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
মোহ ত্যাগ করে সত্যকে জানুন
শ্রীমদ্ভগবত গীতায় কৃষ্ণ অর্জুনকে জানান, মোহের পরিবর্তে সত্য জানার চেষ্টা করা উচিত। অর্থাৎ শরীর একদিন নষ্ট হবে, তাই এর মোহ ত্যাগ করুন। এর পরিবর্তে সমাজ ও ধর্মের স্থাপনার জন্য যা করা উচিত, তা করতে ফাঁকি দেবেন না। বর্তমান যুগে এর প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা যায়, ব্যক্তিকে ঈশ্বর ও ধর্ম জানার চেষ্টা করা উচিত। এমন করলে ব্যক্তি কখনও ভুল পথে চালিত হবে না। পাশাপাশি ধর্ম ও ঈশ্বরকে জেনে সে কাজ করবে। এর ফলে ব্যক্তির সাফল্যের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
No comments