গীতার এই বানী সংশয়মুক্ত করবে মন, দেখাবে কৃষ্ণ-লাভের পথ,,
গীতার এই বানী সংশয়মুক্ত করবে মন, দেখাবে কৃষ্ণ-লাভের পথ,,
গীতায় জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান রয়েছে।
গীতায় জীবনের সারমর্ম লুকিয়ে। জীবনে সঠিক পথ নির্বাচন করবে,, কাম, ক্রোধ, লোভ থেকে মুক্তির পথ দেখায় গীতা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনকে দেওয়া কৃষ্ণের জ্ঞানই গীতা। কী বলেছেন জানুন?
Bhagwat Gita: বেদের তত্ব জ্ঞান উপনিষদ। আবার উপনিষদের সারই গীতা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৃষ্ণ অর্জুনকে যে জ্ঞান দিয়েছিলেন, তা-ই গীতা নামে পরিচিত। গীতায় জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান রয়েছে। ব্যক্তিকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে মোকাবিলার পথ দেখায় গীতা। পাশাপাশি সাফল্য লাভের জন্য কী করতে হবে, তার পথও গীতায় দেখানো রয়েছে। শুধু তাই নয়, কর্মের প্রকারভেদ সম্পর্কেও জানিয়েছেন কৃষ্ণ। গীতার এই ১০ বচন সব যুগেই প্রাসঙ্গিক। কী বলা হয়েছে গীতায় জেনে নিন--
১. গীতায় বলা হয়েছে যে, 'না কেউ মরে, না কেউ মারে, সমস্ত কিছুই নিমত্ত মাত্র...জন্মের পূর্বে কারও শরীর ছিল না, মৃত্যুর পরও তাঁদের শরীর থাকবে না। এই দুইয়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ে শরীর থাকে, তা হলে এর জন্য কেন শোক পালন করো?'
২. আত্মাকে না অস্ত্র কাটতে পারে, না আগুন তাকে পোড়াতে পারে, জল ভেজাতে পারে না, আবার হাওয়া তাকে শোকাতেও পারে না।
৩. যুদ্ধে কৃষ্ণ অর্জুন কে বলেছিলেন, 'হে অর্জুন! তুই না-তো শোক করার যোগ্য মানুষদের জন্য শোক করিস, না পণ্ডিতদের বলিস। কিন্তু যাঁর প্রাণ চলে গিয়েছে এবং যাঁদের প্রাণ যায়নি, তাঁদের জন্যও পণ্ডিতরা শোক করেন না। এক দিন প্রত্যেকের মৃত্যু হবে। কারও মৃত্যু আজ হয়েছে, আবার কারও মৃত্যু কাল হবে। এটি মৃত্যুলোক এবং মৃত্যুই সবচেয়ে বড় রোগ। মৃত্যুকে ত্যাগ করে অমৃত সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করো।'
৪. 'কর্মের ওপরই তোমার অধিকার রয়েছে। কর্মের ফলের ওপর নয়... তাই ফল লাভের আশায় কর্ম করো না। আবার কাজের প্রতি তোমাদের কোনও আসক্তিও থাকা উচিত নয়। যাঁর মন নিজের নিয়ন্ত্রণে আছে, যাঁরা জিতেন্দ্রীয় ও বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ সম্পন্ন, সম্পূর্ণ প্রাণীর আত্মরূপ পরমাত্মাই যাঁর আত্মা, এমন কর্মযোগী কর্ম করা সত্ত্বেও লিপ্ত হয় না। কর্মকে কুশলতার যোগ বলা হয়।'
৫. রাগের কারণে ব্যক্তির স্মৃতিভ্রম ঘটে। এর ফলে তাঁদের বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়। বুদ্ধিভ্রষ্ট হলে ব্যক্তি নিজের ক্ষতি করে বসে।
৬. কৃষ্ণ অর্জুনকে বলছিলেন, 'হে অর্জুন! সমস্ত ধর্ম ত্যাগ করে অর্থাৎ সমস্ত আশ্রয় ত্যাগ করে শুধুমাত্র আমার শরণে এসো। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করে দেব। তাই শোক করো না।...মায়া দ্বারা যাঁদের জ্ঞান হরণ করা হয়েছে, এমন অসুর-স্বভাব ধারণকারী মানুষের মধ্যে নীচ, দূষিত কর্ম করে যে বোকা ব্যক্তি, তাঁরা আমাকে স্মরণ করে না।...কিন্তু অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি সেই ফল নাশবান, তা দেবতাদের যে পুজো করে সেই দেবতারা লাভ করেন। আমার ভক্তরা যে ভাবেই আমার স্মরণ করেন, শেষে আমাকেই লাভ করেন।'
৭. কাম, ক্রোধ ও লোভ এটি তিন ধরনের নরকের দ্বার। এই তিনটি আত্মাকে ধ্বংস করে এবং অধোগতির দিকে নিয়ে যায়। অতএব এই তিনকে ত্যাগ করে দেওয়া উচিত।
৮. গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন, আমি সমস্ত লোক ধ্বংসকারী মহাকাল। এখন এই লোকগুলিকে নষ্ট করতে প্রবৃত্ত হয়েছি। তাই তুই (অর্জুন) যদি যুদ্ধ না-ও করিস, তা হলে এই প্রতিপক্ষের সেনায় যে সমস্ত যোদ্ধা রয়েছেন, তাঁরা এমনিতেও ধ্বংস হবেন।
৯. জগতের এই দু ধরনের পথ অর্থাৎ শুক্ল ও কৃষ্ণ অর্থাৎ দেবয়ান ও পিতৃয়ান পথকে সনাতন মনে করা হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যুলাভ করলে কাউকে ফিরে আসতে হয় না। তাঁরা পরমগতি লাভ করেন। অপরের মধ্যে মৃত্যু লাভ করলে তাঁরা জন্ম-মৃত্যুর বন্ধনে জড়িয়ে পুনরায় ফিরে আসে।
১০. কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছন, 'তোমার কী গেছে যে তুমি কাঁদছো? তুমি কী এনেছিলে, যা হারিয়ে দিয়েছ? তুমি কী জন্ম দিয়েছিলে, যা নষ্ট হয়ে গিয়েছে? তুমি কিছু নিয়ে আসোনি, যা নিয়েছো এখান থেকেই নিয়েছ। যা দিয়েছ এখানেই দিয়েছ। যা নিয়েছ ঈশ্বরের কাছ থেকেই নিয়েছ। যা দিয়েছ তাঁকেই দিয়েছ।
No comments