মেঘনা নদীতে মিলল নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ
মেঘনা নদীতে মিলল নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ
এক দিন আগে নিখোঁজ হওয়া সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি নিখোঁজ হন। শুক্রবার বিকেলে তার মরদেহ উদ্ধার হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) সালেহ আহমেদ পাঠান জানান, শুক্রবার বিকেলে কলাগাছিয়া এলাকায় মেঘনা নদীতে ভাসমান অবস্থায় ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে নৌ পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে রমনা থানায় করা নিখোঁজ ডায়েরির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে মরদেহটি সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের।
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, “মেঘনা নদীতে লাশ পাওয়া গেছে। আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছি। পরিবারের সদস্যরা গিয়ে শনাক্ত করার পর আইনানুগ ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে।”
৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন সরকার দৈনিক আজকের পত্রিকাতে চাকরি করতেন। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখতেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত পাতায়ও তিনি নিয়মিত লিখতেন। মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে, বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায় তিনি নিজের শেষ লেখা হিসেবে উল্লেখ করা একটি নিবন্ধ ওই পোর্টালে পাঠান। ফুটনোটে তিনি লিখেছিলেন, “জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।”
পরিবার জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তিনি প্রতিদিনের মতো সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হন। তবে মোবাইল ফোনটি বাসায় রেখে গিয়েছিলেন। পরে রাতে তিনি আর বাসায় না ফেরায় তার ছেলে ঋত সরকার রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়, বিভুরঞ্জন সরকার বনশ্রীতে অবস্থিত অফিসে যাননি এবং পরিচিত কারও কাছেও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সারাদিন খোঁজাখুঁজির পর রাতে পরিবার থানায় গিয়ে নিখোঁজের অভিযোগ জানায়।
বিভুরঞ্জনের ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছিলেন,
“আমার দাদা সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু অফিসে যাননি, পরিচিত কারও কাছেও দেখা যায়নি। আমরা সবাই খুব উদ্বিগ্ন।”
বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুর আগে লেখা শেষ নিবন্ধটি “খোলা চিঠি” শিরোনামে শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত হয়। ওই লেখায় তিনি নিজের অসুস্থতা, সন্তানের চাকরির অনিশ্চয়তা, মেয়ের পরীক্ষায় ব্যর্থতা ও আর্থিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে হতাশার মধ্যে থাকার কথা তুলে ধরেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি মারাত্মক মানসিক চাপে ভুগছিলেন। তার হঠাৎ নিখোঁজ হওয়া এবং পরবর্তীতে লাশ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় পরিবারসহ সাংবাদিক মহলে নেমেছে শোকের ছায়া।
এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হলেও তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
প্রতিবেদক Hinduism news com

No comments