১৯৭১ সালের ঘাতক পাকবাহিনীর লাশের স্তুপ থেকে তুলে আনা মানবিক বাস্বব গল্প।।
১৯৭১ সালের ঘাতক পাকবাহিনীর লাশের স্তুপ থেকে তুলে আনা মানবিক বাস্বব গল্প।।
পিতাঃ হলেন এরশাদ আলী তাকে দিয়ে আমাদের শিখার অনেক কিছু দিয়ে গেলো? মানবিক মূল্যবােধ হচ্ছে শৃঙ্খল ও ন্যায় সমাজ গঠনের প্রথম শর্ত। মানবিক মূল্যবােধ বলতে কতগুলাে মনােভাবের সমন্বয়ে গঠিত অপেক্ষাকৃত স্থায়ী বিশ্বাসকে বুঝায়। যে চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মানুষের মানবিক আচরণ, ব্যবহার ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে তাই মানবিক মূল্যবোধ।আমরা সকলেই খালি পাত্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছি যা নৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা রূপান্তরিত হতে পারে।
গল্প নহে সত্য!
ধর্ম মানুষ কে মানবতা শিখায়, হিংসা নয় ! ধর্ম মানুষকে বাচাঁর স্বপ্ন দেখায় জিহাদ নয়।
এক মহান মানুষ এরশাদ আলী মোড়লের পিতৃস্নেহ এবং ১৯৭১ সালে খুলনার চুকনগর গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া দুগ্ধপোষ্য সুন্দরীবালা
এক মহান পিতা ১৯৭১ সালের ২১ মে চুকনগরের লাশের স্তূপ থেকে বুকে তুলে নেন পাকি বংশদের বর্বরতায় সদ্য অনাথ এক ৫/৬ মাসের দুগ্ধপোষ্য কন্যাশিশুকে! তাঁকে নিয়ে মানবতার এক অমর গাথা শিক্ষা দিয়ে গেলো আজ তাই আজ লিখছি!
নিজের বাড়িতে আজান,নামাজ কোরান পড়ার পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুটিকে পূজা অর্চনার মাধ্যমে তার পারিবারিক রীতিতে বড়ো করলেন, বিয়ে ও দিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী পাত্রের সাথে।
একাত্তরের ২০ মে বাড়িতে নিয়ে আদর, যত্ন, ভালোবাসায় পিতৃস্নেহে বড়ো করে বিয়ে দিলেন অচেনা সেই অনাথ শিশুকে।
সনাতন ধর্মের সাথে মিল রেখে নাম রেখেছিলেন রাজকুমারী সুন্দরীবালা।
বাড়ির কোণে ঠাকুরঘর তৈরি করে উঠোনে তুলসী গাছ রেখে পূজো আর্চা,গীতা পাঠ শিখিয়ে বড়ো করেছেন। একই ঘরে আযান এবং উলু ধ্বনি একাকার হয়ে যায়।
রাজকুমারী সুন্দরীবালা বেড়ে উঠবার পর সনাতন সম্প্রদায়ের পাত্রের কাছে তাঁর বিয়ে দেন কৃষক এরশাদ আলী মোড়ল।
১৯৭১ সালের ২০ মে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একসাথে ১০ হাজার নর-নারী এবং শিশুকে হত্যা করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলসামস বাহিনী।
একাত্তরের বর্বরতম এ গণহত্যা সংঘটিত হয় খুলনা জেলার চুকনগর গ্রামে ভদ্রা নদীর পাড়ে।
চুকনগরের প্রতিটি নারী-পুরুষকে একটি মন্দিরের সামনে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাযজ্ঞের একদিন পর লাশের পাহাড়ে পিতাকে খুঁজতে আসেন কৃষক এরশাদ আলী মোড়ল।
২১ মে ১০ হাজার নারী-পুরুষের রক্তাক্ত লাশের স্তুপ ঘেঁটে নিহত পিতার লাশ না পেয়ে শোকস্তব্ধ এরশাদ আলী চলে আসবার উদ্যোগ নিতেই শিশুর কান্নার শুনে থমকে যান।
তাকিয়ে দেখলেন, নিহত এক মহিলার বুকের উপর হামাগুড়ি দিয়ে একটি ক্ষুধার্ত শিশু আকুল হয়ে দুধ খুঁজছে!
পিতৃস্নেহে আর্দ্র হৃদয়ে শিশুটিকে কোলে তুলে নিহত মহিলার দিকে তাকিয়ে দেখলেন মহিলাটির হাতে সাদা শাঁখা মাথায় রক্তরাঙা সিঁদুর। সনাতন ধর্মের নিরীহ কন্যাশিশুটির বয়স ছিল তখন আনুমানিক ৬ মাস।
মহান এই বাবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো।
সূত্রঃ উৎপল কান্তি ধর
খুলনা।
Pujan Das
No comments